১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি| দুপুর ২:৩৩| হেমন্তকাল|
শিরোনাম :
বিএনপির শরিক দলগুলো বড় ধরনের সংকটে বিজেপিতে ভাঙ্গনের সুর  কুমিল্লায় নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিশ্ব ডায়বেটিক দিবস পালিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা ও শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি র রোগমুক্তি কামনায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে বিশেষ দোয়া মাহফিল সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন  কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ সম্মেলন এর প্রতিবাদে মানববন্ধন মুরাদনগরে অটোরিকশা চালক মেহেদী হাসান হত্যার খুনিদের ফাঁসী দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল  কাঠমা জনতা বাজারে মাদক ও চুরি প্রতিরোধে কল্পে মানববন্ধন কমলগঞ্জে বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৫ উদযাপন। পঞ্চগড় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিদুর রহমানের এখনও বহাল তবিয়তে

বিএনপির শরিক দলগুলো বড় ধরনের সংকটে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫,
  • 2 Time View

মো. তানভীর আজাদ : বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে জোটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিএনপির শরিক দলগুলো বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা, অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্থানীয় নেতাকর্মীদের আস্থা—সবকিছুর ঘাটতি মিলিয়ে শরিক দলগুলোর একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বাস্তবিক অর্থেই ‘পরাজয়ের ঝুঁকি’ নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।

বিএনপির নিজের সংগঠনগত চাপ, মামলা-হামলার ইতিহাস এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অভিজ্ঞতার তুলনায় শরিক দলগুলোর উপস্থিতি তুলনামূলক দুর্বল। ফলে প্রতিটি আসনেই বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্ব শরিকদের নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ছে।

এ বিশ্লেষণ দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আসন ঘিরে—যেখানে শরিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।

লক্ষ্মীপুর-১: রাজনৈতিক ‘অতীত’ গলার কাঁটা; কমিশনার হারুন এগিয়ে।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে শরিক বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার বিরুদ্ধে তিনি অতীতে জাপা, এনডিপি, পিডিপি সহ একাধিক দলে সক্রিয় ছিলেন। এই দলবদলের ইতিহাস তাকে স্থানীয়ভাবে সন্দেহের চোখে দেখে।

অন্যদিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার হারুনুর রশিদ মাঠে বহু বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে দৃশ্যমান ভূমিকা থাকার ফলে নেতা-কর্মীদের আস্থা তার ওপর বেশি।

২০১৮ সালেও এই আসনে সেলিমের অবস্থান দুর্বল ছিল; এবারও পরিস্থিতি তার বিপরীতেই যাচ্ছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যেই বলছেন—“এই আসনে সেলিমের জয় অসম্ভব নয়, কিন্তু অত্যন্ত কঠিন।”

সব মিলিয়ে লক্ষ্মীপুর-১ শরিক প্রার্থীর জন্য সবচেয়ে জটিল আসনগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

কিশোরগঞ্জ-৫: মুজিব ইকবালের জনপ্রিয়তার সামনে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এ. আহসানুল হুদা।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এ. আহসানুল হুদা মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ—তিনি কোনদিনই এলাকার রাজনীতিতে নিয়মিত ছিলেন না; মানুষের সুখ-দুঃখে তাকে তেমন দেখা যায়নি।

এদিকে এখানে বিএনপির মুজিব ইকবালকে অনেকেই ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা হিসেবে দেখে থাকেন। আন্দোলনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে থাকার দৃশ্যমান ইতিহাসও তার আছে।

ফলে দুটি বাস্তবতা স্পষ্ট যে; মাঠপর্যায়ে মুজিব ইকবাল জনপ্রিয়তায় এগিয়ে, আহসানুল হুদা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় পিছিয়ে।

স্থানীয় নেতারা বাধ্য হয়ে তাকে মনোনয়ন চাইতে সমর্থন দিচ্ছেন, তবে আন্তরিকতা নেই—যা নির্বাচনী বাস্তবতায় বড় ধরনের দুর্বলতা তৈরি করছে।

পটুয়াখালী-৩: হাসান মামুনের শক্ত ঘাঁটি; চাপে ভিপি নূর।পটুয়াখালী-৩ আসনে সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মামুন দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেছেন। তার সামাজিক যোগাযোগ, পরিবারের জনপ্রিয়তা এবং তৃণমূল নেটওয়ার্ক—সবই শক্তিশালী।

প্রতিপক্ষ হিসেবে আছেন আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভিপি নূর। যদিও ভিপি নূর জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত, কিন্তু পটুয়াখালী-৩ এলাকায় তার সাংগঠনিক ভিত্তি তুলনামূলক দুর্বল।

স্থানীয়রা মনে করেন—হাসান মামুন ‘স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে। ট্রাক- নিয়ে ভিপি নূর নির্বাচন করলে জয় এর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

এই আসনে বিএনপির শরিকদের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীই বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

ভাণ্ডারিয়া: ‘আনারস’ প্রতীকের ভারে নুয়ে পড়ছেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবার ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

তবে তার বিরুদ্ধে অনেকেরই প্রধান অভিযোগ মামলা-হামলার কঠিন সময়ে তিনি মাঠে ছিলেন না।

তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ রাখেননি।

গতবার ভাণ্ডারিয়া থেকে লড়লেও এবার পারিবারিক কারণে আসন পরিবর্তন করেছেন। এই পরিবর্তন ভোটারদের আস্থা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্পষ্ট বলছেন, “আনারস প্রতীকে এখানে জয় সম্ভব নয়।” ফলে শরিক দলের এই প্রার্থীও বাস্তবে জয়ী হওয়ার লড়াই থেকে দূরেই অবস্থান করছেন।

ঢাকা-১৭: অপরিচিত প্রতীক এবং জনসংযোগহীনতায় ঝুঁকিতে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭ আসনে ‘গরুর গাড়ি’ প্রতীক নিয়ে লড়তে চান। সমস্যা হলো, এই প্রতীক এলাকায় সম্পূর্ণ অপরিচিত। অতীতে এই মার্কায় কোনও প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।স্থানীয় জনগণের সঙ্গে পার্থের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই ঢাকা-১৭ শহুরে, শিক্ষিত, উচ্চ-আয়ের জনবহুল এলাকা। এখানে নতুন প্রতীকের গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত কম।

স্থানীয় ভোটারদের ভাষায়, “ব্যারিস্টার পার্থকে টকশোতে দেখি, এলাকায় দেখি না।” ফলে এখানেও জোটের শরিক প্রার্থী বাস্তবিক চ্যালেঞ্জের মুখে।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ: শরিকরা দুর্বল—জোট রাজনীতি সংকটে বিএনপির শরিক দলগুলো যে অবস্থায় রয়েছে তাতে তিনটি বিষয় স্পষ্ট;

১. তৃণমূল পর্যায়ে শরিক দলের সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। শরিকদের কোনো আসনেই তৃণমূল নেটওয়ার্ক শক্তিশালী নয়। বিএনপির নিজস্ব নেতারাই তাদের নিয়ে সন্দিহান।

২. আন্দোলন-সংগ্রামে দৃশ্যমান না থাকায় গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। শরিকদের বেশিরভাগ নেতা গত ১৫ বছরে দলের পাশে ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির কর্মীদের বিশ্বাস এই জায়গা থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত।

৩. প্রতীক সংকট, স্থানীয় জনসংযোগহীনতা ও রাজনৈতিক অতীত—সবই দায়ী অপরিচিত প্রতীকস্থা নীয়ভাবে অজনপ্রিয়তা।

এসব মিলিয়ে শরিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রায় সব আসনেই পিছিয়ে। জোটের বোঝা নিয়ে বিপাকে বিএনপি শরিক দলের বেশ কয়েকটি আসনে দুর্বল প্রার্থী দাঁড় করানোর কারণে বিএনপি নিজেই এখন কৌশলগত বিপাকে।

নিজস্ব জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শরিকদের মনোনয়ন দিতে চাপের মধ্যে পড়ছে দলটি।

বর্তমান বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে—“এভাবে দুর্বল শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে গেলে বিএনপি কি কৌশলগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে—যদি শরিকদের দুর্বলতা কাটানো না যায়, তবে বহু আসনেই বিএনপি কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে প্রতীক হারানোর ঝুঁকিতে থাকবে।

নীচে নিউজটি আরও বড়, বিশ্লেষণধর্মী, সংবাদপত্রের ফিচার রিপোর্টের মতো করে সাজিয়ে দেওয়া হলো।
ভাষা, বানান, তথ্য—সব সঠিক রেখে বিশদ ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

মো. তানভীর আজাদ
প্রকাশক: ডেইলি নিউজ ১০ অনলাইন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category